পরিসংখ্যান

বিস্তার পরিমাপের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পরিসংখ্যান - পরিসংখ্যান ১ম পত্র | NCTB BOOK

বিস্তার পরিমাপের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

বিস্তার পরিমাপ উপাত্তের বৈচিত্র্য বা ছড়ানোর মাত্রা নির্ণয় করে। এটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপগুলোর সাথে মিলিত হয়ে ডেটাসেট সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা প্রদান করে। নিচে বিস্তার পরিমাপের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা হলো:


গুরুত্ব

১. উপাত্তের বৈচিত্র্য নির্ধারণ

বিস্তার পরিমাপ একটি ডেটাসেটে উপাত্তের পরিসরের পরিমাণ বা ছড়ানোর মাত্রা প্রকাশ করে। এটি বোঝায় যে উপাত্তগুলি কতটা কাছাকাছি বা দূরে অবস্থিত।

উদাহরণ:
যদি দুটি ক্লাসের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয় এবং দেখা যায় একটি ক্লাসের পরিসর ১০ এবং অন্যটির ৩০, তবে বোঝা যায় দ্বিতীয় ক্লাসে বৈচিত্র্য বেশি।


২. কেন্দ্রীয় প্রবণতার সঠিকতা যাচাই

বিস্তার পরিমাপ কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপগুলোর (যেমন গড়, মধ্যক) নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করতে সাহায্য করে।

  • একটি ছোট পরিসর নির্দেশ করে গড়টি ডেটার প্রকৃত অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করছে।
  • বড় পরিসর নির্দেশ করে গড়টি প্রকৃত অবস্থার থেকে বিচ্যুত হতে পারে।

৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক

বিস্তার পরিমাপ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। এটি ব্যবসা, শিক্ষা, গবেষণা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণ:
দুটি স্টকের মধ্যে যেটির মূল্য বেশি পরিবর্তনশীল (বেশি বিস্তার), সেটি বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।


৪. তুলনা করার সুবিধা

বিভিন্ন ডেটাসেটের বিস্তার নির্ধারণ করে তাদের মধ্যে বৈচিত্র্যের তুলনা করা সম্ভব।

উদাহরণ:
দুটি স্কুলের পরীক্ষার ফলাফলের বিস্তার পরিমাপ করে বোঝা যায় কোন স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফলাফলের বৈচিত্র্য বেশি।


৫. ডেটার স্থিরতা বা স্থায়িত্ব নির্ধারণ

বিস্তার পরিমাপের মাধ্যমে ডেটা কতটা স্থির বা পরিবর্তনশীল তা বোঝা যায়। কম বিস্তার স্থায়িত্ব নির্দেশ করে এবং বেশি বিস্তার পরিবর্তনশীলতা নির্দেশ করে।


প্রয়োজনীয়তা

১. ডেটার বৈচিত্র্য বুঝতে

যে কোনো গবেষণা বা বিশ্লেষণের জন্য ডেটাসেটের বৈচিত্র্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ডেটা কতটা ছড়ানো তা বোঝায়।

২. গড় ও মধ্যকের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে

গড় বা মধ্যক প্রায়ই চরম মান দ্বারা প্রভাবিত হয়। বিস্তার পরিমাপ এটি সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

৩. গবেষণায় উপাত্তের সামঞ্জস্যতা যাচাই

গবেষণায় ডেটাসেট কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা বিশ্লেষণের জন্য বিস্তার পরিমাপ প্রয়োজন।

উদাহরণ:
একটি ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে বিস্তার পরিমাপ ব্যবহার করা হয়। কম বিস্তার মানে ওষুধটির কার্যকারিতা নির্ভরযোগ্য।

৪. পূর্বাভাস তৈরি করা

ডেটার বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ প্রবণতা অনুমান করা সহজ হয়।

৫. ঝুঁকি বিশ্লেষণ

বিস্তার পরিমাপ ঝুঁকি বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ। এটি জানায় ডেটা কতটা পরিবর্তনশীল এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি কতটা বেশি।


সারসংক্ষেপ

বিস্তার পরিমাপ শুধু উপাত্তের বৈচিত্র্য নির্ণয় নয়, বরং বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, গবেষণার নির্ভুলতা নিশ্চিত করা, এবং ভবিষ্যৎ প্রবণতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি উপাত্ত বিশ্লেষণের একটি অপরিহার্য অংশ।

Content added By
Promotion